ককপিট
  • প্রচ্ছদ
  • শিল্প
    • আলোকচিত্র
    • চলচ্চিত্র
    • চিত্রকলা
    • সংগীত
    • স্থাপত্য
    • নাট্যতত্ত্ব
  • সাহিত্য
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • গল্প
    • উপন্যাস
    • মুক্তগদ্য
  • চিন্তা
    • সমাজ
    • রাষ্ট্র
    • দর্শন
    • ইতিহাস
    • বিজ্ঞান
  • আলোচনা
    • বই
    • লিটলম্যাগ
    • ওয়েবজিন
    • গণমাধ্যম
  • অনুবাদ
    • অনুবাদ প্রবন্ধ
    • অনুবাদ কবিতা
    • অনুবাদ গল্প
    • অনুবাদ উপন্যাস
  • সাক্ষাৎকার
  • ভূলোক
  • লোকসংস্কৃতি
  • ভ্রমণ
  • কার্টুন
  • ই-ম্যাগ
  • টিভি
No Result
View All Result
Bengali BN English EN
ককপিট
  • প্রচ্ছদ
  • শিল্প
    • আলোকচিত্র
    • চলচ্চিত্র
    • চিত্রকলা
    • সংগীত
    • স্থাপত্য
    • নাট্যতত্ত্ব
  • সাহিত্য
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • গল্প
    • উপন্যাস
    • মুক্তগদ্য
  • চিন্তা
    • সমাজ
    • রাষ্ট্র
    • দর্শন
    • ইতিহাস
    • বিজ্ঞান
  • আলোচনা
    • বই
    • লিটলম্যাগ
    • ওয়েবজিন
    • গণমাধ্যম
  • অনুবাদ
    • অনুবাদ প্রবন্ধ
    • অনুবাদ কবিতা
    • অনুবাদ গল্প
    • অনুবাদ উপন্যাস
  • সাক্ষাৎকার
  • ভূলোক
  • লোকসংস্কৃতি
  • ভ্রমণ
  • কার্টুন
  • ই-ম্যাগ
  • টিভি
No Result
View All Result
Bengali BN English EN
ককপিট
No Result
View All Result
প্রচ্ছদ চিন্তা

বাংলায় নারী অপরাধী

উৎকলিকা সাহু by উৎকলিকা সাহু
জুন ১৭, ২০২২
in চিন্তা, সমাজ
0 0
0
বাংলায় নারী অপরাধী

অলংকরণ: আল নোমান

0
SHARES
12
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

ঘটনাটি ১৮৮০-এর দশকের প্রথম দিকে কলকাতায় ঘটেছিল। পরপর ৩ বছরে পাঁচজন গণিকার মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল উত্তর কলকাতার মানিকতলার কাছে। রহস্যজনকভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছিল, যা তত্কালীন সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বলা চলে। অবশ্য তাদের হত্যা করা হয়েছিল নাকি তারা আত্মহত্যা করেছিল সে রহস্য পুলিশি মহলকে চিন্তায় ফেলেছিল। অবশেষে ১৮৮৪ সালের ১০ আগস্ট রহস্যটি উন্মোচন হয়। ওই সময় চিৎপুরের পাশে পাঁচু ধোবানীর গলির এক গণিকার মরদেহ পুলিশকে কৌতূহলী করেছিল। অবশেষে তদন্ত করার পরে পুলিশ ত্রৈলোক্য নাম্নী জনৈক গণিকাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের গোয়েন্দা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ত্রৈলোক্য নিজের অপরাধ স্বীকার করেছিল।

ঔপনিবেশিক বাংলায় নারী অপরাধীর সংখ্যা যথেষ্টই ছিল। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তারা জড়িত থাকত। যে নারীর মমতাময়ী রূপ দেখে বাংলা অভ্যস্ত ছিল, সেই বাংলার মানুষই তখন দেখেছিল অনেক নারীর সম্পদলোলুপতা, হিংস্রতা, শঠতা, ক্রূরতা। অপরাধ জগতে নারীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের চরম পরিণতির সাক্ষী ছিল ঔপনিবেশিক বাংলা ও অতি অবশ্যই কলকাতা নগরী।

ঔপনিবেশিক বাংলার অপরাধ জগতে যেসব নারী ত্রাসের সঞ্চার করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ত্রৈলোক্য। অল্প বয়সে তার সঙ্গে গ্রামের এক বৃদ্ধের বিয়ে দেয়ার ফলে কম বয়সেই সে বিধবা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই অসৎ চক্করে পড়ে ত্রৈলোক্য সোনাগাছিতে বিক্রি হয়ে যায়। কলকাতা শহরে সোনাগাছি অঞ্চল বেশ্যাপাড়ার জন্য কুখ্যাত ছিল তখনো, কম বয়সী ত্রৈলোক্যর কাছে অনেক খরিদ্দার আসত। তাই তার রোজগারও হতো বেশ ভালোই। কিন্তু বয়স কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। একটা সময়ের পর ত্রৈলোক্যর রূপ যখন প্রায় অস্তমিত, তখন তার কাছে ধনী খরিদ্দার আসার সংখ্যাও কমতে লাগল। ফলে তাকে আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হলো কালী বাবুর। তার ছেলে হরিকে ত্রৈলোক্য দত্তক নিয়েছিল। এই কালী বাবুর হাত ধরেই ত্রৈলোক্যর প্রবেশ কলকাতার অপরাধ জগতে। ত্রৈলোক্য রেড লাইট অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করতে থাকে। প্রেমিক কালী বাবুর সহায়তায় সে বিত্তশালী বাঙালি পুরুষদের আকৃষ্ট করতে শুরু করেছিল। সেই সব আর্থিক সংগতি সম্পন্ন পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্টতাকালে তাদের পানীয়তে চেতনা হারানো দ্রব্য মিশিয়ে অজ্ঞান করিয়ে তাদের লুট করত। এসব পুরুষও অবচেতন থেকে যখন সচেতন হতো, তখন নিজেদের আবিষ্কার করত নিঃস্ব অবস্থায়। জ্ঞান আসার পর সমাজের এসব ভদ্রলোকের সন্তানরা লোকলজ্জায় বেশ্যাগৃহে যাওয়ার ঘটনাটি গোপন করে যেত। সুতরাং ত্রৈলোক্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠত না। রাজকুমারী নামের জনৈক বেশ্যাকে ত্রৈলোক্য ধুতুরার গুঁড়ো খাইয়ে খুন করেছিল। পাড়াগাঁয়ের মেয়ে ত্রৈলোক্য এসব অপরাধী বিদ্যেতে পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনাধীন কলকাতায় এ বিষাক্ত চূর্ণ দ্রব্য মিশিয়ে হত্যা করা বিরল ঘটনা ছিল না। কলকাতার বুকে এহেন এক নিরীহ গৃহবধূর শেষ পর্যন্ত সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠাটা অবাক করে! তাকে নারী ‘জ্যাক দ্য রিপার’ (উনিশ শতকের লন্ডনের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার) বলা যায়। তার অপরাধের অভিমুখ ছিল বহুবিধ। যেমন গ্রামের কিছু ব্রাহ্মণ পুরুষদের বিয়ে করতে প্রলুব্ধ করত দালালদের ঘটক সাজিয়ে। এরপর কনে ও তার নকল পরিবার সে তৈরি করত। তারপর ওইসব পুরুষকে সেই সাজানো কন্যাদের রূপে মুগ্ধ করত। বিধু নামে আরো এক বেশ্যাকে কনে সাজিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে উপস্থিত করা হতো। দিনক্ষণ দেখে কলকাতার কোনো ভাড়া বাড়িতে বিয়ে হতো। গ্রামে বিয়ে করে যাওয়ার পর ‘স্বামী’ ও ‘স্বামীর বাড়ির আত্মীয়’ এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে বিধু অনেক দামি গহনা ও বস্তুসামগ্রী পেত। কিছুদিন পর দ্বিরাগমনে যাওয়ার নীতি পালন করতে এবং বাপের বাড়ি যাওয়ার অজুহাতে বিধু তার ‘স্ত্রীধন’ নিয়ে কলকাতায় চলে যেত এবং ত্রৈলোক্য সেসব বিক্রি করে বিধুর সঙ্গে টাকা-পয়সা ভাগ করে নিত। বিধুর ‘নতুন স্বামী’ গোটা কলকাতা তন্ন তন্ন করে খোঁজ করলেও সে তার নববিবাহিত ‘স্ত্রী’কে আর খুঁজে পেত না। উনিশ শতকের এ ঘটনা হয়তো পাঠকদের পরবর্তী যুগের দুটি চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট। ১৯৭৪ সালে তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় ‘ঠগিনী’ ছায়াছবিতেও বিবাহসূত্রে স্বামী সম্পদ লুণ্ঠন করার মতো ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিতেও নারী অপরাধীর বিষয়টি দেখা গেছে। সাম্প্রতিককালে ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র ‘ডলি কি ডোলি’তেও এমন নারী অপরাধীর গল্প বলা হয়েছে যে বিভিন্ন পুরুষকে বিয়ে করে তার সর্বস্ব চুরি করে নিয়ে পালায়। ১৮৮০-এর দশকের মতো বাস্তবের ঘটনা একবিংশ শতাব্দীর কাহিনী ও চলচ্চিত্রেও তার ছাপ কোথাও না কোথাও ফেলে যাচ্ছে। ত্রৈলোক্যকে সহজে কেউ গ্রেফতার করতে পারত না প্রমাণের অভাবে। তবে জনৈক এক পুরুষ নিজে ত্রৈলোক্যর কাছে ঠকার পর পুলিশে অভিযোগ করলেও সে তার রূপ ও নিরীহ নিষ্পাপ ব্যবহার দিয়ে থানার সবাইকে মিথ্যে বলে ছাড়া পেয়ে যায়। তখন ওই প্রতারিত ব্যক্তি গোয়েন্দা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে সাহায্যের জন্য যায় এবং প্রিয়নাথের বুদ্ধিতেই ত্রৈলোক্য পরবর্তীকালে গ্রেফতার হয়েছিল। ১৮৮৪ সালে ত্রৈলোক্যর ফাঁসি হয়।

কলকাতার বেশ্যাপাড়ার সঙ্গে অপরাধমূলক কাজকর্মও কিছু জড়িত থাকত। নারীরা সবসময় যে আর্থিক কষ্টে অপরাধে যুক্ত হতো, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে তারা এ কাজে জড়িত হতো। পতিতালয় থেকে বড় হওয়া কন্যারা বা পতিতার কন্যারা সমাজের অন্যান্য স্তরের ভদ্র নারীদের জীবনধারাকে অনুকরণ করত। তারা সমাজের মূল স্রোতের নারীদের মতো শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করত, অভিনয় করত, স্টেজে উঠত, গান গাইত, কিন্তু সবাই এমন ছিল না। মেহেদি বাগানের সুশীলার মতো নারারা কিন্তু তাদের লালসা চরিতার্থ করতে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হতো। সুশীলা এক পতিতার কন্যা ছিলেন। সে ইংরেজি ভাষাও শিখেছিল। ১৮৭২ সালে ব্রাহ্ম ম্যারেজ আইন অনুসারে এক ভদ্রলোকের স্ত্রীও হয় সে। কিন্তু কিছুদিন পর সে স্বামীকে ত্যাগ করে এক প্রথিতযশা ব্যারিস্টারের সাহচর্যে আসে। সুশীলার দুষ্কৃতিকর্ম অন্যরকম ছিল। সে গহনার দোকানে বহু মূল্যের গহনা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করত। পরে অবশ্য ধরাও পড়েছিল। বড়ো বাজারের গহনা দোকানে এরূপ জালিয়াতি করে গহনা নিয়ে পালাতে গিয়ে চন্দননগরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

কলকাতায় একসময় বেশ্যাবৃত্তি সামাজিকতাকে উল্লঙ্ঘন করা বলে মনে করা হতো। একে পাপ বলে মনে করা হতো, কিন্তু বেশ্যাবৃত্তিকে আইনত অপরাধ বলে ভাবা হতো না। বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনকালে কৃষিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মন্দা, আর্থিক অনটন, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে ক্লিষ্ট হয়ে বহু নারী বাধ্য হয়ে পতিতাপল্লীতে বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য হতো। বিশেষ করে যারা ধর্ষণের শিকার হতো বা বিক্রি হয়ে যেত, সামাজিক ভয়ে তাদের বাড়ির লোকরা গ্রহণ করত না, সে কারণে অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তারা এ কাজে লিপ্ত হতো। ১৮৫১-৭৫-এর মধ্যে ছয়টি দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আবার ১৮৭৬-১৯০০-এর মধ্যে আরো ২৪টি দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবার তাদের কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতো। এদের বেশির ভাগের ভবিষ্যতের ঠিকানা হতো বেশ্যাপাড়ায়। বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে অপরাধ ও হত্যার মতো ঘটনাও কখনো কখনো যুক্ত হয়ে যেত। উনিশ শতকের বেশ্যাপাড়ার এ অন্ধকার দিকটি প্রচারে চলে এসেছিল, তাই সে সময় কলকাতার রেডলাইট অঞ্চল নিয়ে একটি গানও তৈরি হয়েছিল—

কলিকাতার বেশ্যাদের লীলা অতি চমত্কার,
মায়া বোঝে সাধ্য কার?…
…জোড়াবাগানে গেলে, মিষ্ট কথা বলে
আগে ভুলায়ে শেষ কালেতে দেয় ফাঁসি গলে
আবার সোনাগাছি থাকে যারা, কসাইয়ের মতো ব্যবহার…

ব্রিটিশ প্রশাসন ব্যবস্থা প্রায় তটস্থ থাকত এদের নিয়ে। কারণ কলকাতায় যেকোনো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেই পতিতাপল্লীর কেউ না কেউ যুক্ত থাকত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ্যাপল্লীর নারীদের ব্রিটিশ সরকার বিশেষ আইনানুসারে আইনি ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল। যেমন ১৮৬৪ সালের ক্যান্টনমেন্ট আইন এবং ১৮৬৮ সালের কন্টাজিয়াস ডিজিজ অ্যাক্ট।

ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলায় ১৮৯০-এর দশকে আঙুলের ছাপ নিয়ে অপরাধী বা অভিযুক্তকে শানক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। নারী অপরাধী ও শিশু অপরাধীদের সংখ্যা তখন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পুলিশি রেকর্ডে নারী অপরাধীদের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। এ অন্ধকার জগতে যে শুধু পতিতাপল্লীর নারীরাই যুক্ত ছিল তা নয়, সেই সব উচ্চাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিমতী নারীরাও অন্ধকার জগতে প্রবেশ করত। অনেক সময় স্বামীর প্রতি নিষ্ঠাবান স্ত্রীও এ জগতে এসেছে। আবার বাবার ঋণ শোধ করতে অর্থ উপার্জনেও বহু নারী অন্ধকার জগতে আসতে বাধ্য হয়েছে। আসলে অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হতে গেলে নারীদের মানসিকতাকেও বিশ্লেষণ করতে হয়। যেসব নারী অন্ধকার জগতে আসে, তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবেও তৈরি থাকতে হতো। তত্কালীন পত্রিকা, বটতলার সাহিত্য বা চটি বইগুলোতেও এসব রহস্যময়ী নারীর বিভিন্ন কীর্তিকলাপ সম্পর্কে লেখা হতো। বাঙালিরা এগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়তেনও। শুধু লোক ঠকানো কাজেই নয়, ঔপনিবেশিক বাংলায় ডাকাতির ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীদের যুক্ত হতে দেখা গেছে। অবশ্য সেকালে ডাকাতি অনেক সময়েই অপরাধ নায় বরং ছিল বিদ্রোহ। যেমন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রংপুরের জমিদারনী দেবী চৌধুরানীকে অষ্টাদশ শতব্দীতে ব্রিটিশ রেকর্ডে ‘ডাকাত’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সন্ন্যাসী বিদ্রোহ যেটি এক প্রকার কৃষক বিদ্রোহ—তাতে যুক্ত ছিলেন। কলকাতার অদূরে বামা নামক এক নারীকেও ডাকাতদের প্রধান নেত্রী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। আইন ভঙ্গকারী নারীদের অনেকেই নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ‘ঠগী’দের কথাও বলা উচিত। ১৮৩০ সালে গভর্নর জেনারেল বেন্টিংক হেনরি শ্লিম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ঠগীদের নির্মূল করতে। ব্রিটিশ প্রশাসন বিপ্লবীদেরও সন্ত্রাসবাদী বিবেচনা করত, অপরাধী জ্ঞান করত। তাই তাদের মধ্যে অপরাধী ও বিপ্লবীদের পার্ধক্য নির্ণয়ের আশা করা যেত না।

শিশু হত্যা, ডাকাতি, লোক ঠকানোর মতো কাজে সেকালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা জড়িত থাকতেন। বাংলার যৌনকর্মীরাও অন্ধকার জগতে যুক্ত থাকত এটাও ব্রিটিশ রিপোর্ট অনুসারে প্রায় সবাই অবগত। সংক্রামক ব্যাধির আইনে এনে যৌনকর্মীদের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হতো। নারী যৌনকর্মীদের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়ছিল, তা ১৮৮১ সালের বাংলার আদমশুমারি থেকেই প্রমাণিত। প্রথম দিকে যৌনকর্মীদের জোরপূর্বক নিবন্ধীকরণ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও পরের দিকে তা স্বেচ্ছামূলক করা হয়েছিল। নারীদের এ অপরাধ প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যা সমাজে আতঙ্কের বাতাবরণও তৈরি করেছিল।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ব্রিটিশ শাসনামলে নারী অপরাধীর সংখ্যা এত বৃদ্ধি পাচ্ছিল কেন? দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্রিটিশ প্রশাসন সমগ্র বাংলা তথা ভারতকে শক্ত হাতে শাসন করত, তাদের অগোচরে বাংলার নারীরা কীভাবে এবং কেন অন্ধকার জগতে নিজেদের নিক্ষেপ করত? এটা কি শুধুই অর্থনৈতিক তাড়নায় নাকি এর পেছনে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা সাইকোলজিক্যাল কোনো কারণ ছিল, সেটাও ভাবনার বিষয়। কম বয়সে বৈধব্য লাভ বা সামাজিক শোষণে ক্লান্ত নারীরা হয়তো এভাবে সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত হতো। অথবা শোষিত-নিপীড়িত নারীরা সমাজের কাছে অপমানিত হয়ে তাদের ভেতরে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গকে অন্ধকার জগতে উগরে দিত। শুধু অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য বা স্বামী ও পিতাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে নারীরা অসামাজিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছিল এমন ধারণা একপেশে বিচার। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের অর্থনীতি ও তত্কালীন সমাজে নারীদের ওপর অত্যাচারজনিত কারণে নাকি নারীদের মনস্তাত্ত্বিক কোনো তাড়নায় ঔপনিবেশিক বাংলা নারী অপরাধীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তা নিরূপণ করা প্রয়োজন।


ঋণ স্বীকার: প্রবন্ধটি লিখতে সুমন্ত ব্যানার্জী রচিত ‘The Wicked City : Crime and Punishment in Colonial Calcutta’ গ্রন্থটির সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশ: সিল্করুট, বণিক বার্তা।

ট্যাগ: অপরাধউৎকলিকা সাহুনারীবাংলার সমাজ
উৎকলিকা সাহু

উৎকলিকা সাহু

ইতিহাস গবেষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, নৈহাটী ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র মহিলা মহাবিদ্যালয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মেনান্দার: ইন্দো-গ্রিক সাম্রাজ্যের সফল এক স্থপতি
ইতিহাস

মেনান্দার: ইন্দো-গ্রিক সাম্রাজ্যের সফল এক স্থপতি

জুন ১৭, ২০২২
বিদ্রোহের ইতিহাসে ফকির মজনু শাহ
ইতিহাস

বিদ্রোহের ইতিহাসে ফকির মজনু শাহ

জুন ১৭, ২০২২
মধ্যযুগে বাংলার গ্রামের জনজীবন
সমাজ

মধ্যযুগে বাংলার গ্রামের জনজীবন

জুন ১৭, ২০২২
ককপিট

ককপিট সৃজন ও বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার কাগজ। বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্তবুদ্ধির চর্চায় শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি ও চিন্তার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে এর আত্মপ্রকাশ। প্রগতিশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক পাঠক তৈরিতে প্রগতিবাদী লেখকদের লেখার পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রচারে ককপিটের তৎপরতা জারি থাকবে।

সাম্প্রতিক

  • মেনান্দার: ইন্দো-গ্রিক সাম্রাজ্যের সফল এক স্থপতি জুন ১৭, ২০২২
  • বিদ্রোহের ইতিহাসে ফকির মজনু শাহ জুন ১৭, ২০২২
  • মধ্যযুগে বাংলার গ্রামের জনজীবন জুন ১৭, ২০২২
  • আমরা
  • যোগাযোগ
  • লেখা পাঠান
  • লেখক
Cockpit-ককপিট

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২২ – ককপিট.কম

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • শিল্প
    • আলোকচিত্র
    • চলচ্চিত্র
    • চিত্রকলা
    • সংগীত
    • স্থাপত্য
    • নাট্যতত্ত্ব
  • সাহিত্য
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • গল্প
    • উপন্যাস
    • মুক্তগদ্য
  • চিন্তা
    • সমাজ
    • রাষ্ট্র
    • দর্শন
    • ইতিহাস
    • বিজ্ঞান
  • আলোচনা
    • বই
    • লিটলম্যাগ
    • ওয়েবজিন
    • গণমাধ্যম
  • অনুবাদ
    • অনুবাদ প্রবন্ধ
    • অনুবাদ কবিতা
    • অনুবাদ গল্প
    • অনুবাদ উপন্যাস
  • সাক্ষাৎকার
  • ভূলোক
  • লোকসংস্কৃতি
  • ভ্রমণ
  • কার্টুন
  • ই-ম্যাগ
  • টিভি

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২২ – ককপিট.কম

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password? Sign Up

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?